ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রযুক্তির অধিক আসক্তি ক্ষতি করছে শিশুদের 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৯, ২০ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:২৪, ২০ নভেম্বর ২০১৯

কিছুদিন আগেও শিশুদের হাতে প্রযুক্তিগত ডিভাইসগুলোর ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে কোনো দু:শ্চিন্তা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে শিশুদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব ভাবিয়ে তুললো মা-বাবাদের। ইনারার ঘটনাটি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। 

সাত বছরের ইনারা ছোট্ট হাতে আট ইঞ্চির ট্যাবলেটে অনুশীলন করছিল। তার বাবা ও মা পেশাজীবী হওয়ায় তারা যথেষ্ট সময় ইনারাকে দিতে পারছিল না। এতে সে এক বছর আগে থেকেই বাড়িতে তার একমাত্র বন্ধু এ ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গেই সময় কাটায়। সময় কাটে অনলাইন গেইস খেলে। 

তবে ইনারা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বুঝতে পারল যে, স্কুলে তার বন্ধু বানানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সে বেশ একা হয়ে গেল। অনলাইনে তার কিছু অপরিচিত বন্ধু ছিল। একাকিত্বের কারণে সে গভীর রাতে কান্নাকাটি করত। তার বাবা-মা বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। তার বাবা মা ইনারাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। 

ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল’র শৈশব বিকাশ প্রোগ্রামের প্রধান রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক, সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। যেমনটি অনেক গবেষণায় পাওয়া যায়। অবশ্যই বাবা-মা সব সময় তাদের বাচ্চাদের জন্য সেরাটা চান এবং সচেতনভাবে তাদের বাচ্চাদের কখনই ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। তবে যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাই আমাদের পিতা-মাতাদেরকে যত্নশীল হতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসগুলির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং এ অনুযায়ী শিশুদের লালন করতে হবে। এছাড়াও সাইবারের অনেক বিষয় আছে যা আমরা জানি না।’ 

ইলেক্ট্রনিকের অত্যাধিক ব্যবহারের কারণে ঢাকা শহরের শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও শৈশব বিকাশ কেন্দ্রের প্রধান ডা. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা যারা প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার করেছিল তাদেরকে আমাদের এ কেন্দ্র আনা হয়েছে। এখানে আনা হয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিশুদের, দেখা যায় তারা পড়াশুনায়ও পিছিয়ে পড়েছে। এসব বাচ্চারা সামাজিকভাবে মেলামেশায়ও পিছিয়ে পড়েছে।’

মাধ্যমিকে পড়ুয়া শিশুরা বিশেষভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগ্রহী। এতে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাটা উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। একটি দৈনিকের মতে, গেল বছরে ১৪৮জন শিশু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ার কারণে অত্মহত্যা করেছে। এতে সাইবার সুরক্ষা ও বাবা-মায়ের সচেতনতার বিষয়টি বড় হয়ে পড়ে।

ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত শিশুরা অনলাইনে হিংস্রতা, সাইবার অপরাধ ও ডিজিটাল হয়রানির শিকার হয়। বয়স্করা যখন ডিজিটাল সুরক্ষা আইন এবং তাদের নিজস্ব অধিকারগুলি সম্পর্কে জানেন না তখন তাদের কাছে এমনটি আশা করা যায় না। ফলে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া বা বিষয়টি শিশুরা বড় হলেও মনস্তাত্ত্বিক বড় হওয়া হয় না। 

অনলাইনে শিশুরা কি দেখছে তা সীমাবদ্ধ করতে হবে, বেশিরভাগ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং সফটওয়্যারগুলি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। কেননা এতে শিশুর গোপনীয়তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে নিরাপদ অনলাইন সমগ্রী থেকে তারা দূরে সরে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তিন থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি প্রযুক্তি বা স্ক্রিনের সামনে থাকা উচিত নয়। বিষয়টা পেশাজীবী বাবা-মায়ের জন্য বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। তবে নিয়মের একটা ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বলে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়টিতে বাচ্চারা যেন মনে না করে তাদেরকে অধিক বিধিনিষেধের মধ্যে আনা হচ্ছে। এখানে শিক্ষামূলক ভিডিওগুলোকে বিনোদনমূলক করার একটা উত্তম পন্থা হতে পারে। 

ডা ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আজকাল বাবা-মা  উদ্বিগ্ন। শিশুরা কান্নকাটি করলে তাদের হাতে ডিভাইস দিয়ে শান্ত করেন। যাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সমাজে বাবা ও মায়ের প্রশিক্ষণ ও সামাজিক শিক্ষার অভাব রয়েছে।’

দেশের ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ১ শত ২৮ জন শিশু-কিশোরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন এবং টেলিনর গ্রুপ চুক্তি করেছে। শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা জন্য ৪ লাখ পিতামাতা, শিক্ষক এবং নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ‘বাংলাদেশে শিশু অনলাইন সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ’ নামে একটি প্রকল্পে দুই কোটি মানুষের কাছে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ৫০ হাজার লোক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। 

শিশুর উপর প্রযুক্তির মাত্রারিতিরিক্ত ব্যবহার বিশ্বব্যাপি এক গুরুত্বপূণ বিষয়। তবে গবেষণায় ফলাফলে ভিন্ন তথ্যও পাওয়া যায়। শূণ্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মোবাইল ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। শিশুদের বেশিরভাগই বয়ঃসন্ধিকালে গোড়ায় পৌঁছেও বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম হয় দেরীতে। ডিভাইসের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাবগুলো এখনও সচেতনার মধ্যে আসেনি। শিশুদের বিকাশে বিষয়টি ভাবা দরকার।
/এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি